নড়াইলের মেয়ে ইলোরার ছবি বিক্রি হয় লাখ টাকার!

একরঙা কাপড়ের ওপর সুই–সুতায় ফুটিয়ে তোলেন মানুষের ছবি। দেখলে মনে হয়, কোনো গুণী চিত্রশিল্পীর রংতুলির কাজ এটি। বাস্তবে কিন্তু তা নয়। কাজটি করেন রাজধানীর আজিমপুরের বাসিন্দা ইলোরা পারভীন, যিনি পেশাদার চিত্রশিল্পী নন।

প্রায় বছর বিশেক আগে কাপড়ে সুই-সুতায় মানুষের ছবি ফুটিয়ে তোলার এই কাজ শুরু করেন ইলোরা পারভীন। তখন নিছক শখের বশে কাজটা শুরু করলেও এখন করছেন ব্যবসা হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামসহ বিখ্যাত ব্যক্তিদের ছবি তৈরি করেন তিনি। গত কয়েক বছরে এ ধরনের ছবি বিক্রি করে পেয়েছেন প্রায় অর্ধকোটি টাকা।

নড়াইলের মেয়ে ইলোরা ছবি আঁকার উৎসাহ পান তাঁর বাবার বন্ধু, প্রতিবেশী এবং দেশের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের কাজ দেখে। অবশ্য তাঁদের পরিবারে সুই–সেলাইয়ের কাজ করার একটা রেওয়াজ ছিল। সে অনুযায়ী প্রথম দিকে বিভিন্ন জামাকাপড়, ওয়ালমেট ইত্যাদিতে নকশা করতেন। এরপরে আস্তে আস্তে কাপড়ের মধ্যে মানুষের মুখাবয়ব ফুটিয়ে তোলার কাজ শিখে নেন। এ কাজে এস এম সুলতানের সঙ্গে কাজ করা দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস তাঁকে সহযোগিতা করেন বলে জানান ইলোরা।

এখন যেকোনো ছবি সামনে রেখে নানা রঙের সুতা ব্যবহার করে হুবহু ছবি তৈরি করতে পারেন ইলোরা। তিনি জানান, শুরুর দিকে একেকটি ছবি তৈরি করতে বছরখানেক সময় লাগত। তবে এখন কাজের দক্ষতা বাড়ায় এক–দেড় মাসের মধ্যেই হয়ে যায়। প্রতিটি ছবি তৈরি করতে তাঁর ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। তবে সময় ও শিল্পের মান বিচারে তিনি একেকটি বিক্রি করেন ১ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা দামে।

২০১৯ সালের মে মাসে ইলোরা পারভীনের কাজ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় প্রথম আলোয়। ইলোরা জানান, এর মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে তাঁর ছবি কাজের ভিত তৈরি হয়। কারণ, ওই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে বিভিন্ন জায়গা থেকে তাঁর কাছে কাজের জন্য প্রস্তাব আসতে থাকে।

ইলোরা পারভীন জানান, এখন পর্যন্ত তিনি শতাধিক ছবি বানিয়েছেন। এর মধ্যে বিক্রি করেছেন প্রায় অর্ধশত ছবি। বাকিগুলো রেখেছেন প্রদর্শনের জন্য। ব্যক্তিপর্যায় ছাড়াও সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লোগো ও ছবি বানান তিনি। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে তাঁর ছবি এখন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও যেতে শুরু করেছে বলে জানান ইলোরা।

ছবি বিক্রির পাশাপাশি বিভিন্ন প্রদর্শনী ও মেলায় অংশ নেন এই নারী উদ্যোক্তা। চলতি বছরে মালয়েশিয়া ও তুরস্কে প্রদর্শনীতে ছবি নিয়ে গেছেন। গত বছর ঢাকায় জাতীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা (এসএমই) মেলায় অংশ নিয়ে প্রায় ১৫ লাখ টাকার ছবি বিক্রির আদেশ পেয়েছেন। এবারে মিলেছে পাঁচটি ছবি বিক্রির আদেশ।

ইলোরা পারভীন প্রথম আলোকে জানান, পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ কাজ সেরে বাকি সময় তিনি সুই–সুতার কাজ করেন। এ কাজে স্বামী সরকারি কর্মকর্তা ফয়জুল্লাহ বিশ্বাস ও দুই কন্যা তাঁকে সহযোগিতা করেন। নিজের অভিজ্ঞতা অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চান ইলোরা পারভীন। এ জন্য নড়াইলে দুস্থ নারীদের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছেন তিনি।

শেয়ার করুন:

Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn

সম্পর্কিত পোস্ট

দেড়শ নারীকে স্বাবলম্বী করছেন ফেরদৌসি পারভীন!

পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি নারীদের একটা অংশ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু পুঁজির অভাবে অনেকেই উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পারছে না। থামি. পিননসহ বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী পোশাক প্রস্তুত করতে

উদ্যোক্তাদের জন্য মানসিক চাপ কমানোর কিছু পন্থা

আমরা আজকে উদ্যোক্তাদের জন্য আলোচনা করবো মানসিক চাপ কমানোর পন্থা নিয়ে কারন উদ্যোক্তারা অনেকেই মানসিক চাপ নিয়ে তার উদ্যোগ কে সফলার দিকে নিয়ে যেতে পারে

বাড়ির ছাদে ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী রায়হান!

‘পরিবারে কোনো আর্থিক অনটন ছিল না। পড়েছি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই আমার মতো ছেলে কেন ছাগল পালন করবে, এটাই ছিল মানুষের আপত্তির কারণ। কিন্তু মানুষের সেসব