রাস্তায় ঘুরে ঘুরে শাড়ি বিক্রি করতেন,এখন ৫০ কোটির মালিক!

আমরা যদি আপনাকে বলি যে শূন্য থেকে শুরু করেও আপনি কোটিপতি হতে পারেন, তাহলে আপনি হয়তো বিশ্বাস করবেন না। কিন্তু আজকে আমরা যার কথা বলতে যাচ্ছি তার গল্পটি পড়ার পরে আপনি সঠিক উপায়ে পরিশ্রম করে সাফল্য পাওয়ার কথা বুঝতে পারবেন। আমরা আজ বীরেন কুমার বসাকের কথা বলছি। যিনি আগে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে এবং মানুষের ঘরে ঘরে শাড়ি বিক্রি করতেন এবং এখন ৫০ কোটি টাকার কোম্পানির মালিক হয়েছেন।

বীরেন কুমার বসাক ১৯৫১ সালের ১৬ মে বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার চার ভাই ও দুই বোন আছে, যাদের মধ্যে তিনি সবার ছোট। বীরেন তাঁতি পরিবারের সদস্য। তাঁর পিতা বাঁকো বিহারী বসাকও একজন তাঁতি ছিলেন, তবে তিনি কবিতা লেখারও অনুরাগী ছিলেন। এটি প্রায় চার দশক আগের কথা, যখন বীরেন কুমার কলকাতার রাস্তায় শাড়ি বিক্রি করতেন, তিনি এখনও তার কঠিন সময়গুলি ভুলতে পারেন না। বীরেন তার কাঁধে শাড়ির বিশাল বান্ডিল নিয়ে যেতেন।

তারপর দরজায় দরজায় কড়া নাড়ে খদ্দের খুঁজতেন। কিন্তু, এখন বীরেন কুমার শাড়ি শিল্পের একজন সুপরিচিত ব্যবসায়ী। আজ দেশের প্রতিটি কোণ থেকে গ্রাহকরা তাদের সাথে যুক্ত এবং তারা পাইকারি ব্যবসাও করে। বর্তমান সময়ে বীরেনের বার্ষিক টার্নওভার ৫০ কোটিরও বেশি। বীরেন তার বুদ্ধিমত্তা, আত্মবিশ্বাস, কঠোর পরিশ্রমের জোরে ১৯৮৭ সালে ৮ জনকে নিয়ে একটি নিজস্ব দোকান খোলেন।

আজ তার ব্যবসা এতটাই বিস্তৃত হয়েছে যে এখন সারা দেশ থেকে প্রতি মাসে প্রায় ১৬,০০০ শাড়ি হাতে তৈরি করে বিক্রি করা হয়। এখন তার সাথে ২৪ জন কর্মচারী কাজ করছে এবং তার কোম্পানিতে ৫,০০০ তাঁতিও আছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রাক্তন ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলি, বিশিষ্ট শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী ওস্তাদ আমজাদ আলী খান, অভিনেত্রী মৌসুমী চ্যাটার্জি সহ তার গ্রাহকদের দীর্ঘ তালিকায় বড় বড় ব্যক্তিত্বের নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতদসত্ত্বেও বীরেনের আচরণে কখনোই ঔদ্ধত্যের আভাস পাওয়া যায় না।

আজও তার আচরণ নম্র ও সরল, সম্ভবত এই কারণেই গ্রাহকরা তার থেকে শাড়ি কিনতে পছন্দ করে। বীরেন জানান, তার বাবার আয় কম ছিল, যার কারণে পরিবারের মৌলিক চাহিদাও মেটানো যেত না। তার বাবা একক কবিতা পরিবেশন করতেন যার জন্য তিনি পেতেন মাত্র ১০ টাকা। এভাবে তখনকার পরিস্থিতি এমন ছিল যে পরিবারের পক্ষে দুবেলা খাবার জোগাড় করাও কঠিন হয়ে পড়েছিল।

পড়ালেখা শেষ করে কাজে চলে জান তিনি। ফুলিয়ায় তাঁতিদের একটি কেন্দ্র ছিল, যেখানে তারা শাড়ি বোনার কাজ পান। সে সময় বীরেন শাড়ি বুননের কাজের জন্য দৈনিক মাত্র আড়াই টাকা করে পেতেন। এভাবে বহু বছর ওই কারখানায় কাজ করার পর ১৯৭০ সালে বীরেন নিজের ব্যবসা শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন।

যার জন্য তার অর্থের প্রয়োজন ছিল, তাই তিনি তার বাড়ি বন্ধক রেখে ১০,০০০ টাকা ঋণও নিয়েছিলেন। এরপর তার বড় ভাই ধীরেন কুমার বসাকও তাকে এই ব্যবসায় সঙ্গ দেন এবং কলকাতা থেকে শাড়ির বান্ডিল কিনে বিক্রি করতে বের হন। বীরেন বলেন, “আমরা স্থানীয় তাঁতিদের কাছ থেকে শাড়ি কিনতাম এবং তারপর সেগুলো বিক্রি করতে কলকাতায় নিয়ে যেতাম।

আমরা প্রতিদিন ভোর ৫টায় শহরে যাওয়ার জন্য লোকাল ট্রেন ধরতাম, আমাদের কাঁধে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ কেজি মালপত্র নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে শাড়ি বিক্রি করতাম। যদিও আমাদের শাড়ির মান ভালো ছিল এবং কম শিপিং মূল্যের কারণে আমরা প্রচুর গ্রাহক পেতে পারি।”মাসে ৫০ হাজার টাকা লাভ করতে শুরু করেন।

ধীরে ধীরে তার ব্যবসা বাড়তে থাকে এবং ক্রেতার সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে তিনি শাড়ির অর্ডার পেতে থাকেন। এভাবে তাদের লাভও বাড়েতে থাকে। ১৯৭৪ সাল নাগাদ, তারা এই দুই ভাইয়ের আয় যোগ করে প্রতি মাসে প্রায় ৫০,০০০ টাকা আয় করত। তারপর ১৯৮১সালে এই দুই ভাই দক্ষিণ কলকাতায় ১৩০০ বর্গফুটের একটি জমি কিনেছিলেন।

যার জন্য তারা প্রায় ৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেন। ১৯৮৫ সালে এই ভাইয়েরা এই জমিতে তাদের দোকান খুলে নাম দেন ধীরেন অ্যান্ড বীরেন বসাক অ্যান্ড কোম্পানি, তারপর এখান থেকে শাড়ি বিক্রি করতেন। ভাগ্যও তার সাথে ছিল, তাই পরের এক বছরে এই দোকান থেকে যে ব্যবসা করেন তাতে প্রায় এক কোটি টাকা লাভ হয় তাদের।

এর পর দুই ভাই আলাদা হয়ে যায়। দেশভাগের পর ১৯৮৭ সালে বীরেন ফুলিয়ায় ফিরে আসেন। এরপর গ্রামে এসে শাড়ির পাইকারি ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেন বীরেন। এই ব্যবসায় তার সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গিও তাকে অনেক সাহায্য করেছিল কারণ তিনি শাড়ির নতুন ডিজাইন করতে পছন্দ করতেন।

এরপর ১৯৮৭ সালে বীরেন বসাক অ্যান্ড কোম্পানি নামে প্রায় ৮ জন কর্মচারী নিয়ে তার বাড়িতে একটি নতুন দোকান শুরু করেন। শুরুতে প্রায় ৮০০ তাঁতি তার সঙ্গে কাজ করতেন। বীরেন বহু বছর ধরে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকায় অনেক শাড়ি ব্যবসায়ীর সঙ্গে তার সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।

এই ব্যবসা শুরু করার আগে তিনি শাড়ি বিক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের নতুন কাজের কথা জানান। এভাবে তারা শাড়ি বিক্রেতাদের কাছ থেকেও অর্ডার পেতে থাকেন। এইভাবেই, বীরেনের ব্যবসা উন্নতি করতে থাকে।
বীরেন (বীরেন কুমার বসাক) তাঁর অসামান্য কাজের জন্য ২০১৩ সালে কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রক দ্বারা সন্ত কবির পুরস্কার এবং এই জাতীয় অনেক পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছিলেন।

শেয়ার করুন:

Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn

সম্পর্কিত পোস্ট

দেড়শ নারীকে স্বাবলম্বী করছেন ফেরদৌসি পারভীন!

পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি নারীদের একটা অংশ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু পুঁজির অভাবে অনেকেই উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পারছে না। থামি. পিননসহ বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী পোশাক প্রস্তুত করতে

উদ্যোক্তাদের জন্য মানসিক চাপ কমানোর কিছু পন্থা

আমরা আজকে উদ্যোক্তাদের জন্য আলোচনা করবো মানসিক চাপ কমানোর পন্থা নিয়ে কারন উদ্যোক্তারা অনেকেই মানসিক চাপ নিয়ে তার উদ্যোগ কে সফলার দিকে নিয়ে যেতে পারে

বাড়ির ছাদে ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী রায়হান!

‘পরিবারে কোনো আর্থিক অনটন ছিল না। পড়েছি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই আমার মতো ছেলে কেন ছাগল পালন করবে, এটাই ছিল মানুষের আপত্তির কারণ। কিন্তু মানুষের সেসব