লোকাল ফেব্রিক বিজনেস!পাইকারী দাম কেমন ও লাভ কেমন?

হৃদি ফারিহা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। পোশাকের ডিজাইন করা তার নেশা। অনেক লেডিস পোশাকের নিজস্ব ডিজাইন তার সংগ্রহে রয়েছে। কিন্তু এখনও নিজের নকশায় কোন পোশাক তৈরি করা হয়নি। এমন সময় ইচ্ছাটা পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এবার পোশাকগুলো তার নিজস্ব ডিজাইনে তৈরি করবে।

সে উদ্দেশ্য নিয়ে পরিচিত একটি টেইলার্স-এ আলোচনা করেছে এবং আশ্বাস পেয়েছে নির্দেশনা অনুসারেই তৈরি করে দেয়া হবে। তবে সমস্যা অন্য জায়গায়। তাহলে সে কাপড় সম্বন্ধে অজ্ঞ। যার দরুন কিছুটা হলেও শঙ্কিত। নিজের আঁকা ডিজাইনের পোশাক ভাল মানের কাপড় দিয়ে তৈরি করা না হলে কষ্ট বৃথা যাবে তার।

অনেক ভাবনার পর সমাধান পাওয়া গেল, তার বান্ধবী নিশাত ইয়াসমিন এ অবস্থা থেকে মুক্ত হতে হাত বাড়িয়ে দিল। পছন্দের পোশাক নিজের ইচ্ছেমতো তৈরি করার জন্য বিভিন্ন টেইলার্স রয়েছে, আছে অনেক ফেব্রিক্সের দোকান, তবে আকর্ষণীয়, মানানসই ও গুণগতমান সম্পন্ন পোশাক তৈরির জন্য প্রয়োজন ভালমানের কাপড় বা ফেব্রিক্স।

সে ক্ষেত্রে অবশ্য ফেব্রিক্স নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই কিছু ধারণা থাকতে হবে। তা না হলে গুণগত কাপড় মিলবে না সাথে সঠিক মূল্যের চেয়ে বেশি অর্থ প্রদান করতে হবে। ফেব্রিক্স ক্রয়ে উত্তম দোকান বা মার্কেট সম্বন্ধে ধারণা থাকলে আরও বেশি উপকৃত হওয়া যায়।

থ্রিপিস ফেব্রিক্স : ফেব্রিক্সের দোকানগুলোয় অনেক ডিজাইনের আকর্ষণীয় আন-স্টিচ থ্রিপিস পাওয়া যায়। ফলে সহজেই পছন্দ অনুসারে থ্রিপিসের ফেব্রিক্স ক্রয় করা যায়। ফলে সালোয়ার, কামিজ ও ওড়নার জন্য আলাদাভাবে ফেব্রিক্স সংগ্রহের ঝামেলা পোহাতে হয় না। এতে অনেক কষ্টও কম হয় এবং সময় বেঁচে যায়।

বিভিন্ন মার্কেট ও দোকানে দেশী-বিদেশী, দামী-স্বল্পমূল্যে বিভিন্ন ধরনের আনস্টিচ থ্রিপিস পাওয়া যায়। দেশীয় থ্রিপিস এর ফেব্রিক্স-এর মূল্য পড়বে ৪০০ থেকে ২,২০০ টাকা এবং বিদেশী ১,৮০০ থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত। ইসলামপুর মনসুর ম্যানশন, মনিরা ম্যানশন, ইসলামপুর মার্কেট, চাঁদনীচক, গাউসিয়া, সদরঘাট, বঙ্গবাজার, তালতলা সুপার মার্কেট, লক্ষ্মীবাজার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মার্কেট, শান্তিনগর, মিরপুর বেনারসী পল্লীর বিভিন্ন ফেব্রিক্স-এর দোকানে মানসম্মত, আকর্ষণীয় ও সুলভ মূল্যে আনস্টিচ থ্রিপিস শোভা পায়। চৈতি ফ্যাশন, এশিয়া ফ্রাশন, এটি কালেকশন, জ্যোতি ফ্যাশন, গাঁও-গ্রাম কালেকশন আনস্টিচ থ্রিপিসের জন্য অন্যতম।

সকল লেডিস পোশাকের ফেব্রিক্স: কমপ্লিট আনস্টিচ থ্রিপিস পাওয়া যায়। তবে অনেক তরুণী ক্রয়ে আগ্রহী হয় না। নিজের পছন্দ অনুসারে বিভিন্ন ধরনের ফেব্রিক্স ব্যবহার করে থ্রিপিস তৈরি করে। যা তারা বিভিন্ন কাপড়ের দোকান হতে সংগ্রহ করে থাকে। দেশী-বিদেশী অনেক প্রকার ফেব্রিক্সের সমাহার হতে খুব সহজেই ইচ্ছের কাপড় ক্রয় করে।

সালোয়ার, কামিজ, ওড়না, লেহেঙ্গা, আনারকলি, মাজাককালি, ব্লাউজ, পেটিকোট, ঘাগরা টপস্কাট, শট-টনস, কুর্তাসহ সকল প্রকার মেয়েদের পোশাকের ফেব্রিক্স রয়েছে বিভিন্ন মার্কেট ও দোকানগুলোয়। ক্রয় করার জন্য যাওয়া যায় চাঁদনীচকের রাসা ফেব্রিক্স, ড্রিম ল্যান্ড ফেব্রিক্স, হাজী ফেব্রিক্স, গ্রামীণ রেখা, সাদিত ফেব্রিক্স, ইসলামপুরের হিমেল ফেব্রিক্স,বস্ত্রশোভা, কাজী ফেব্রিক্স, মা-বাবার দোয়া, সাউথ প্লাজায়। এছাড়াও রয়েছে সদরঘাট মার্কেট, বিক্রমপুর মার্কেট, নিউমার্কেট, মিরপুর-১ মাজার মার্কেট, পল্লবী বেনারসী পল্লী, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরাসহ আরও অনেক মার্কেট। উল্লেখিত মার্কেট ও দোকানসমূহে খুচরা ও পাইকারি উভয় ধরনের ফেব্রিক্স বিক্রি হয়ে থাকে। পছন্দ ও চাহিদা মাফিক খুব অনায়াসে ফেব্রিক্স সংগ্রহ করা যাচ্ছে।

সাদিত ফেব্রিক্স: চাঁদনীচকে অবস্থানরত সাদিত ফেব্রিক্স লেডিস কাপড়ের জন্য বেশ জনপ্রিয়। দোকানটিতে বিভিন্ন মূল্যে পণ্য বিক্রয় হয়ে থাকে। দেশী ফেব্রিক্সের মধ্যে ধুপিয়ান প্রতি গজ ৮০ টাকা, চোসা ১০০ টাকা, গ্রামীণ চেক পড়বে ১৫০ টাকা, সার্টিন ৮০ টাকা, লিলেন ১৫০ টাকা, কটন ৯০ টাকা, প্রতি গজ বিদেশী ফেব্রিক্স থাই কটন মিলবে ১৪০ টাকা, লিলেন প্রিন্ট ২৮০, পিওর জর্জেট ১৬০ টাকা, লামা কটন পড়বে ২০০ টাকা, এন্ডি সিল্ক পাওয়া যাবে ২২০ টাকা। লেজার জর্জেট ১৪০ টাকা, সুতি পাকিস্তানী কাতান ৬৫০ টাকা। এছাড়াও সাদিত ফেব্রিক্সের রয়েছে লেহেঙ্গা তৈরির ফেব্রিক্স কাতান প্রিন্ট যার মূল্য প্রতিগজ ৪০০ টাকা, জর্জেট কাতান ১,৪০০ টাকা, মাখন সিল্ক ১৪০ টাকা, এমেরিকান ব্রেস্ট ১১০ টাকা, ইতালিয়ান জর্জেট ১৩০ টাকা, থেচার প্রিন্ট ১,৯০০ টাকায় মিলবে। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী মোঃ আহমেদ বলেন, এসব ফেব্রিক্স বেশ প্রচলিত। এছাড়া অনেক ধরনের ফেব্রিক্স রয়েছে যার মূল্যও সাধ্যের মধ্যে।

ছেলেদের পোশাকের ফেব্রিক্স: সঠিক মানের কাপড় যাচাই করতে এবং এ সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা থাকলেও আকর্ষণীয় পোশাক সাধ্যের মধ্যেই পাওয়া যাবে। আনস্টিচ এসব শার্ট ও প্যান্ট পিস ঢাকাসহ দেশের সব পোশাক মার্কেট ও ফেব্রিক্সের দোকানগুলোয় লক্ষ্য করা যায়। ইসলামপুর চায়না মার্কেট, ইসলামপুর প্লাজা, এসি আন্ডার গ্রাউন্ড মার্কেট, সমবায় মার্কেট, রমনা ভবন, এলিফ্যান্ট রোড, সাইন্সল্যাবরেটরি রোড, নিউমার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স, ইস্টার্ন মল্লিকা, বসুন্ধরা সিটি মার্কেটে দেশী বিদেশী সব ধরনের ফেব্রিক্স পাওয়া যায়। শার্ট পিসের মূল্য পড়বে ৩৫০ থেকে ১৫০০ টাকা এবং প্যান্ট পিস ৫০০ থেকে ২,০০০ টাকায় মিলবে। বিদেশি প্যান্টের ফিব্রিক্সের মধ্যে মাল্টি সফট টাচ, ওরবিন, সুতরা অন্যতম।

পাঞ্জাবির ফেব্রিক্স: ইসলামপ্রধান দেশের পাঞ্জাবি-পায়জামা হলো অন্যতম প্রধান ধর্মীয় পোশাক। তেমনিভাবে এ দেশের ধর্মীয় পোশাক হিসেবেও পাঞ্জাবি-পায়জামা বেশি প্রচলিত। বুটিকস হাউস ও বিভিন্ন শোরুমে আকর্ষণীয় ডিজাইনে ও মানানসই পাঞ্জাবি মিললেও অনেকেই আছেন তৈরি পাঞ্জাবি পরিধান করেন।

এজন্য বিভিন্ন মার্কেট ও দোকান ঘুরে পোশাকটির ফেব্রিক্স ক্রয় করতে হয়। ইসলামপুর, নিউমার্কেট, চাঁদনীচক বসুন্ধরা সিটি, মিরপুর মাজার মার্কেট, পল্লবী নরসিংদীসহ দেশের অধিকাংশ ফেব্রিক্স মার্কেট ও দোকানে দেশী বিদেশী পাঞ্জাবির কাপড় পাওয়া যায়।

ক্লাসিক ফেব্রিক্স: চাঁদনীচক মার্কেটে বহুল প্রচলিত ক্লাসিক ফেব্রিক্স-এ পাঞ্জাবির কাপড়ের বিশাল আয়োজন রয়েছে। এ সমাহারে রয়েছে দেশী বিদেশী বহু ধরনের মূল্যর বেশ গ্রহণযোগ্য ইন্ডিয়ান এন্ডি সিল্ক। প্রতি গজের দাম পড়বে ২২০ টাকা, ধুপিয়ান সিল্ক ৮০ টাকা, আড়ং সুতি ১২০ টাকা, সুতি জ্যাকেট ১৪০ টাকা, সুতি ফ্যান্সি কটন ১৮০ টাকা, সুতি ৯০ টাকা, কুমিল্লার খাদি ১২০ টাকা, নরসিংদীর খাদি ৮০ টাকা, কুমিল্লার তাঁত ১৪০, ধূপছায়া ১০০ টাকা, ইন্ডিয়ান কাতান ৬০০, সুপরা সিল্ক ৬০০, চায়না কটন ৮০০ টাকা, ভয়েল ১০০ টাকা। এসব ফেব্রিক্স দিয়ে ধর্মীয় পোশাক হিসেবে পাঞ্জাবি, কাবলী, জুব্বা সালোয়ার, ফতুয়া বেশি তৈরি করা হয়।

নিজস্ব ডিজাইনে ও পছন্দের পোশাক তৈরিতে দেশী ফেব্রিক্সের পাশাপাশি বিদেশী কাপড়ও অনেক ব্যবহৃত হচ্ছে। দেশী ফেব্রিক্সের মূল্য তুলনামূলক কম। তবে বিদেশী পণ্যটি বেশ আকর্ষণীয় হয়ে থাকে তাই এ ফেব্রিক্সের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বেড়ে যাচ্ছে। ক্রেতাদের সুবিধার্তে আধিবাংলা মার্কেট ও দোকানে শোভা পাওয়া বেশ স্বাচ্ছন্দ্য মতো সুলভ মূল্যে ফেব্রিক্স সংগ্রহ করা সম্ভব হয়।

শেয়ার করুন:

Facebook
Twitter
Pinterest
LinkedIn

সম্পর্কিত পোস্ট

দেড়শ নারীকে স্বাবলম্বী করছেন ফেরদৌসি পারভীন!

পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি নারীদের একটা অংশ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু পুঁজির অভাবে অনেকেই উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পারছে না। থামি. পিননসহ বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী পোশাক প্রস্তুত করতে

উদ্যোক্তাদের জন্য মানসিক চাপ কমানোর কিছু পন্থা

আমরা আজকে উদ্যোক্তাদের জন্য আলোচনা করবো মানসিক চাপ কমানোর পন্থা নিয়ে কারন উদ্যোক্তারা অনেকেই মানসিক চাপ নিয়ে তার উদ্যোগ কে সফলার দিকে নিয়ে যেতে পারে

বাড়ির ছাদে ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী রায়হান!

‘পরিবারে কোনো আর্থিক অনটন ছিল না। পড়েছি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই আমার মতো ছেলে কেন ছাগল পালন করবে, এটাই ছিল মানুষের আপত্তির কারণ। কিন্তু মানুষের সেসব